দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়ার উপায় কী? বিভিন্ন লোক বিভিন্ন প্রকারের কলাকৌশল, একসারসাইজ বা মেডিটেশনের কথা বলেন। এসবই সাময়িক সমাধান। এসবে প্রকৃত কাজের কাজ হয় না।

কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার জন্য যে ফর্মুলা দিয়েছেন, সেটিই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি প্রকৃত উপায়।

এক আয়াতে এমন বলা হয়েছে— أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই দিলের সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করা যায়। (সুরা রাদ, আয়াত ২৮)

তো প্রশান্তি কী? দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার নামই প্রশান্তি। মানে, যদি তুমি দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে চাও, তা হলে আল্লাহকে স্মরণ করো। আল্লাহকে স্মরণ করার অর্থ মাথা ঝুলিয়ে জিকির করা নয়।

আল্লাহকে স্মরণ করার অর্থ— আল্লাহর মাঝে একাকার হয়ে যাওয়া, আল্লাহর মাঝে বসবাস করা। দেখুন— আল্লাহর মাঝে বসবাস করার অর্থ এই নয়; আল্লাহ আক্ষরিক অর্থে সর্বত্র বিরাজমান। বরং আল্লাহর গুণ সর্বত্র বিরাজমান।

এর উপমা হিসাবে সামনে পেশ করা যায় সূর্যকে। সূর্য আমাদের থেকে ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরে, কিন্তু তার আলোকরশ্মি এই মাটিতেও খুব তীব্র। এর মানে সূর্য তার আলো ও তাপ নিয়ে আমাদের মাঝেই আছে, যদিও সেটি ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরে।

তো আল্লাহর সঙ্গে বসবাসের অর্থ এই নয়, আল্লাহর সত্তার মাঝে বসবাস করা। বরং আল্লাহর সিফাত, আল্লাহর গুণ, আল্লাহর যে রহমত আমাদের জড়িয়ে রেখেছে, তার মাঝে বাঁচতে শেখা।

তো সমস্যা হচ্ছে— মানুষ দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়ার উপায় খুঁজছে মানুষের তৈরি কলাকৌশলে আশ্রয় নিয়ে, যেখানে আল্লাহ তার জন্য আপন আশ্রয় প্রসারিত করে রেখেছেন।

মনে রাখবেন— মানুষের তৈরি আশ্রয় সবসময় সসীম থাকবে, কখনও অসীম হবে না। এই জন্য দেখবেন, মানুষ কখনও তুষ্ট হয় না। একজনের মামুলি একটা বসতবাড়ি ছিল, ছোট ঘর। তো সে বড় করে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করল।

আপাত চোখে সে তার আশাআকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছে, বিশাল ঘরবাড়ি বানানোর সময় তো অবশ্যই মনে আনন্দ কাজ করছে। কিন্তু যেই ঘরের কাজ পূর্ণ হয়ে যাবে, তার মধ্যে আর কোনো আনন্দ থাকবে না। কারণ তার অন্তরে আল্লাহর স্মরণ নেই।

তাকে সারা দুনিয়ার মালিক বানিয়ে দিলেও তার মাঝে অশান্তি থাকবে। কিন্তু সে যদি দুশ্চিন্তামুক্ত হয়, তার অন্তরে যদি আল্লাহ থাকেন, তা হলে ছোট ঘরেও সে প্রশান্তিতে দিন গুজরান করবে।